রামাদান কারীম vs রমজান কারীম

রামাদান কারীম vs রমজান কারীম

ধর্ম লাইফষ্ট্যাইল

রামাদান কারীম!

রামাদান মুবারক বলায় খটকা লাগল কি? নাকি, বেশ কিছুকাল ধরে এমনি শুনতে থাকায় আমাদের কানে সয়ে গেছে? আমাদের ছাত্র অবস্থায় আমরা চলতি কথায় রমজানই শুনে এসেছি। তা হলে আবার রমাদান এলো কোত্থেকে?

‘রমজান’ হঠাৎ ‘রামাদান’ হয়ে গেল কিভাবে?

আজ সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একদল উইশ করছেন রামাদান মুবারক। আর মন্তব্যের ঘরে আসছে নানা জনের নানা মত। রমজান বললে কি আমি কম মুসলিম হয়ে যাচ্ছি? বা রামাদান বললে বেশি সওয়াব?

রমজান (আরবি: رمضان‎‎ রামাদান,) হল ইসলামী বর্ষ-পঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস, যেই মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ রোজা পালন করে থাকে।

রমজান মাসে রোজা পালন ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়। রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ৩০ দিনে হয়ে থাকে।

রমজান এর উপ্তত্তি কোথায়?

মুসলিমদের জন্য পবিত্র এবং এবাদতের মাস এই রামাদান। অথচ, রামাদান শব্দটি উপমহাদেশীয় মুসলিমদের শব্দকোষে ঈষৎ নতুন, শব্দটি আরবি। আর ‘রমজান’ যে শব্দটি, সেটির উৎস ফার্সি, এসেছে উর্দু থেকে।

রামাদান এর উৎপত্তি কোথায়?

পবিত্র কোরানশরিফ লেখা হয়েছে প্রাচীন আরবিতে। সেখানে ‘রামাদান’ শব্দটিই রয়েছে। যদিও এই শব্দে ‘দ’ এর যে ব্যবহার, তার কোনও সমগোত্রীয় অক্ষর ও উচ্চারণ বাংলা বা উর্দুতে নেই। এমনকি, প্রাচীন আরবিতেও যে ভাবে উচ্চারিত হত এই ‘দ’, তা আজকের নব্য আরবিতে পাওয়াও দুষ্কর।

ইসলাম ধর্মের ঐতিহাসিক উৎস হালের সৌদি আরবের মক্কা-মদিনা।

তাই স্বভাবগত জনপ্রিয়তায়, ধরে নেওয়া হয়, শব্দ-ভাষা যত বেশি আরবি হবে, ততই তা হয়তো ‘সহি ইসলামি’ হয়ে উঠবে! অনেকেই আবার আরব মাত্রই ইসলামের সঙ্গে সমান হিসেবে দেখেন।

আরব মানেই ইসলাম নয়, আবার ইসলাম মানেই আরব ভূমি নয়। আরবে যেমন মুসলিম ছাড়াও ইহুদি, খ্রিস্টানদের বাস রয়েছে, যাদের নাম, চলা-বলা-পোশাক-পরিচ্ছদ সবই কমবেশি এক।

ইসলাম কালে কালে গোটা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করেছে। তাই, বিভিন্ন জায়গার ভাষা, পরিচ্ছদ, স্থানীয় সংস্কৃতির মধ্যেই ঢুকে পড়েছে আজকের ইসলাম। এবং এই আত্তীকরণের সময় স্থানীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই ইসলাম ধর্ম বিস্তৃত হয়েছে।

বাংলাদেশে ইসলামের বিস্তার মূলত মধ্য এশিয়া থেকে। তাই ইরানি বা পার্সিয়ান সংস্কৃতিই বহু ভাবে গৃহীত হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের দৈনন্দিনে।

ভাষা, উপাসনার ধারা থেকে পোশাক পরিচ্ছদেও পড়েছে তার প্রভাব। আরবি শুদ্ধ নাকি ফার্সি শুদ্ধ— এই বিতর্কের মানেই হল, এমন কোনও ‘শুদ্ধ’ ‘পিওর’ অতীতের দিকে যাত্রা করার চেষ্টা, যেটা অনেকটা মরীচিকার মত।

ইসলামের ক্ষেত্রেও একমাত্র মান্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে আরব ভূমির ইসলামকে।

রোজার বদলে সিয়াম, নামাজের বদলে সালাত, রমজানের বদলে রামাদানকে মান্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এরই ফলশ্রুতিতে।
আরও ‘শুদ্ধ’ হতে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব বোধ, নিজস্ব যাপন, নিজের মৌলিকত্ব? আদম হয়ে যাচ্ছে আদাম, ইউরোপ/আমেরিকায় গিয়ে এডাম।

তবে উপাসনার লক্ষ্য যদি হয় স্রষ্টার নৈকট্য লাভ, সেখানে ভাষা কি মুখ্য হতে পারে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *