এক তপ্ত বিকেলে গেলাম সাগর দর্শনে। যারা তপ্ত নিয়া সন্দেহ করেন, তাদের জন্য জানাই, তখন বাহিরে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। যে কোন আউটিং এ বাচ্চাদের চাইতে বাচ্চার মায়ের আগ্রহ থাকে বেশি। বয়স এবং ওজন বিপক্ষে থাকায় বাচ্চাদের মত লাফালাফি করতে পারেন না, এই যা। এই-ট্যুরও ব্যতিক্রম না, তাই সাগরে নামার কাপড় থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত ব্যাগে ভরে বের হলাম।
এই লেখায় আরও থাকছে,
– কিভাবে যাবেন
– গাড়িতে যাত্রার সময় এবং দূরত্ব
– কি কি সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা আছে
– নামাজ/গোসল এবং পাবলিক টয়লেট আছে কি?
– কোথায় খাবেন?
– গ্রিল / BBQ এর অনুমতি আছে কিনা?
– কাছাকাছি আর কি আছে?
আমার বর্তমান বাসস্থান থেকে মাত্র ১২৫ কিলোমিটার দূরে, বিচে ঢুকার গেটেই একটা বিশাল তাঁবু। তাঁবুর ভেতর দিয়েই যেতে হবে। পথের দুইপাশে ২ টা টেবিল, প্রতিটাতে স্যানিটাইজার এবং টিস্যু পেপার রাখা। বাচ্চারা নিজ দায়িত্বে সান-স্ক্রিনের মত করে স্যানিটাইজার সারা গায়ে লাগিয়ে, ‘বাঙ্গালী ফ্রি পাইলে আলকাতরাও খায়’ সেই প্রবাদের মান রাখায় ব্যস্ত।
সিক্যুরিটির এক লোক কে দেখলাম খাতায় কিছু লিখতে। যেহেতু আমাদের কে নিজের নাম কিংবা দুলাভাইর নাম জিজ্ঞাসা করে নাই, আমরা তাই ধরেই নিলাম ওনার কাজ গেটে দাঁড়িয়ে লেখালিখি করা।
তাঁবু থেকে বের হয়েই বিশাল সাগর। ও আচ্ছা, এটা বালির সাগর। পেছন এবং সামনের দিক বাদে, আর সব দিকেই শুধু বালি। মাঝে মাঝে কিছু খেজুর এবং নারিকেল গাছ। যেহেতু পানির সাগর দেখতে এসেছি, বালি দিয়ে কি করবো! অতএব আগে বাড়।
প্রায় ৫/৬ মিনিট বালিতে হাটার প্রাকটিস করার পরে দেখা মিলল পানির। আহা, সাগর সৈকত। সামনে, ডানে এবং বামে শুধু পানি এবং পানি।
পানিতে নামার আগেই একটা সাইন-বোর্ড! বাংলা তর্জমা করে যা বুঝলাম, সেটা হচ্ছে… লাইফ গার্ডের অনুপস্থিতে পানিতে নামা নিষেধ।
অথচ পানি কিংবা ডাঙ্গা, কোথাও তো সেই মহান লাইফ-গার্ডকে দেখা যাচ্ছে না।
কিছুক্ষণ ইতিউতি তাকানোর পরে পাওয়া গেল এক ভদ্রলোককে। কি খুঁজছি বলার পরে, উনি জানালেন উনিই লাইফ গার্ড। ওনার বিশাল ভুঁড়ি দেখে অবশ্য আমি ঠিক ভরসা করতে পারছিলাম না। উনি ভুঁড়ি সমেত ওনাকে বাঁচাবেন, নাকি আমাকে!
আমি সাতার জানি না। তাই, পানিতে নামার আগে আমি ১০০ বার ভাবি, আবার উঠে আসতে পারবো কিনা। আফসোস, আল্লাহ আমাকে মাছের মত ফুলকা দেন নাই। নইলে এইসব ভুঁড়িওয়ালা লাইফ-গার্ডের উপর আমার ভরসা করতে হয় না।
লাইফ-গার্ড তো পাওয়া গেল, এখন আমার দরকার ইন্সপিরেশন।
সামনে কেউ পানিতে নেমেছেন, হোক সেটা সুন্দরী ললনা কিংবা আমার মত বুড়ো ভোঁদড়! চারিদিকে যখন ইন্সপিরেশনের খোজ করছি, তখন দেখি দূরে পানিতে ২ টা মাথা দেখা যায়। ওনারা এতটাই দূরে যে ওনাদের ভরসায় পানিতে নামা এবং প্যারাসুট ভেবে দড়ি নিয়ে বিমান থেকে ঝাপ দেয়া একই কথা।
এর পর কি! সাতার না জানা এই আমি, পানিতে পা ভিজিয়ে সমুদ্র দর্শন এর ষোল-আনাই উসুল ভাব নিয়া নিজেকে বুঝ দেয়
মিরফা বিচ, আরব আমিরাতে আমার দেখা অন্যতম নির্জন সৈকত। বিভিন্ন রঙের এত ঝিনুক এবং শামুক আমি আর কোথাও দেখিনি। বিচের অন্যান্য সুবিদাধি বেশ সাজানো-গোছানো। সাগরে গোসলের শেষে মিঠা পানিতে গোসল এবং পা ধোয়ার জন্য অনেক গুলো শাওয়ার টেন্ট আছে। আছে নামাজের জায়গা এবং ওয়াকওয়ে। ২/৩ মিনিটের ড্রাইভিং দূরত্বে আছে সুপার-মার্কেট, ক্যাফেটেরিয়া এবং পার্ক। মাছ ধরার জন্য অনুমতি থাকলে ছিপ নিয়ে বসে যেতে পারবেন। গ্রিল/BBQ করার জন্য আছে আলাদা ব্যবস্থা।
লোকেশন: https://goo.gl/maps/7MbFJdc2vmk2mSV78
দূরত্ব: ১৬২ কিলোমিটার (আবুধাবি সিটি সেন্টার থেকে মিরফা বিচ)
যাত্রার সময়: ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট (আনুমানিক)
সব তো জানলেন, কবে যাচ্ছেন এই চমৎকার জায়গায়!