মে দিবস! বাংলাদেশের শিক্ষিত শ্রমিকদের ভাগ্যে কি আছে?

আজ মে দিবস! বাংলাদেশের শিক্ষিত শ্রমিকদের ভাগ্যে কি আছে?

বিবিধ মতামত

বাংলাদেশের নিন্ম আয়ের শ্রমঘন কাজ করা পেশাজীবীর কথা ভাবলেই আমরা ভাবি ‘রিকশাওয়ালা’ দের কথা।

আমার ছাত্র জীবনে একসময় সর্বনিন্ম ৩ টাকার রিকশা ভাড়া ছিল। আজকে সেই সর্বনিন্ম ভাড়াই ২০ থেকে ৩০ টাকা।

প্রায় ১০ গুন ভাড়া বৃদ্ধির এই চিত্র যখন বাস্তব, তখন ওনাদের দৈনিক আয় আসলে কত?

দেশের একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকের করা রিপোর্ট অনুযায়ী ঢাকাতে রিকশাওয়ালাদের দৈনিক আয় ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। গড় হিসেবে ওনাদের মাসিক রোজগার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা!

রিকশা চালানো শেখার জন্য আমি জীবনে কোনদিন কোন ট্রেনিং সেন্টার এর নাম শুনি নাই। এর মানে হচ্ছে ঢাকার রিকশাওয়ালারা প্যাডেল ঘুরানোর মত শক্তি থাকলেই রিকশা চালানো শুরু করে দেন। যেহেতু নানান বয়সি রিকশাচালক দেখতে পাই, তাই ধরে নিচ্ছি রিকশা চালানোর জন্য বয়স ততটা বিবেচ্চ্য না।

এবার দেখা যাক, আমাদের দেশের এভারেজ গ্রাজুয়েট দের কি অবস্থা?

প্রায় ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাগে ১৬ থেকে ১৮ বছরের। এরপর এন্ট্রি লেভেলের জবে এদের বেতন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিক কত?

সদ্য গ্রাজুয়েটদের মধ্যে কুলীন শ্রেণী হচ্ছেন ইঞ্জিনিয়াররা।

আমার জানা শোনা থাকায় এবং হিসেবে সুবিধার জন্য আসুন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার দের ঠিকুজিটা কেমন, সেটা দেখা যাক।

আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পেতে চান ?

দেখে নিন আপনি কিভাবে সহজেই আবেদন করতে পারবেন।

দেশের জনপ্রিয় একটা জব পোর্টালে IT Executive নামে সার্চ দেয়ার পরে প্রথম পেজের থেকে কিছুটা ধারনা পাওয়া গেল।

নামে ইঞ্জিনিয়ার এবং পোশাকে স্যুটেড-বুটেড এই সব কামলাদের বেতন ধরা হচ্ছে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তুলনার বিচারে এটা রিকশাওয়ালার চাইতেও কম।

রিকশা চালকের কাজের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়েই বলি, বিনা ট্রেনিং এ যদি ইঞ্জিনিয়ার এর চাইতে বেশি রোজগার করা যায়, তাহলে মানুষ পড়াশোনাটা কেন করবে! গরমের মধ্যে ফুটা পকেটে স্যুট পরে ভাব নেবার জন্য?

শ্রেণীগত বায়াসনেসের জন্য আমি এখানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের কথাই বললাম। আমার অন্য ভাইয়েরা তাদের গ্রুপের অবস্থা বললে কাছাকাছি চিত্রই হয়তো পাবেন।

আজ মহান মে দিবস।

বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের স্বীকৃতির দিন।

শ্রমিকদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিবছর ১ মে সারা বিশ্বে দিবসটি পালন করা হয়।

অথচ হাল আমলের নামে এক্সিকিউটিভ কিন্তু ‘আদতে কামলা’ শ্রমজীবী শ্রেণী নিজের কথা নিজে বলার মেরুদণ্ড হারিয়ে আজকে ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’।

‘শ্রমিক হয়েও শ্রমিক হতে না পারা’ এইসব এক্সিকিউটিভ অথবা ইঞ্জিনিয়াররা রিকশায় চড়ে প্রেম করার সময়েও বুঝবেন না, রিকশা-ওলার চাইতে ওনাদের শ্রমের মূল্য কম।

জগতের সকল শ্রমিক, বিশেষত কম্পিউটার কামলা এবং অন্য পেশাজীবীদের জন্য মে দিবসের শুভেচ্ছা।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

আজকে মে ডে। ১৮৮৬ সালে শিকাগো তে শ্রমিকদের পক্ষে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হচ্ছিলো। সেই সমাবেশে শেষ পর্যন্ত অনেক সাধারণ মানুষ এবং পালিশ মারা যায়। তাদের স্মরণে পহেলা মে কে মে দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *